আজ ১০ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। এর মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পায় বাঙালির স্বাধীনতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
অবশেষে দেখা মিললো ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সের কমেট বিমানটির। অপেক্ষায় তখন লাখো জনতা। উৎকণ্ঠা ছাপিয়ে গগনবিদারী জয় বাংলা ধ্বনি। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দিদশা থেকে ফিরে এসেছেন নেতা। বিজয় অর্জনের পরেও প্রিয় নেতার ফিরে আসার জন্য রনক্লান্ত বাঙালিকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২৫ দিন। বাহাত্তর সালের ৮ জানুয়ারি মুক্ত হবার পর ইংল্যান্ড ও ভারত হয়ে ১০ জানুয়ারি স্বদেশ ভূমিতে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু।
একুশবার তোপধ্বনি আর লাখো মানুষের আনন্দোল্লাসের মধ্য দিয়ে বরণ করা হলো বঙ্গবন্ধুকে। ইতিহাসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে লক্ষ জনতার ভালবাসায় সিক্ত জাতির পিতা। বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধুর গন্তব্য তখন রেসকোর্স ময়দান। পথে জনতার বিজয় উল্লাস, ব্যানার-ফেস্টুন আর শ্লোগানে মুখরিত। ইতিহাসের পরিক্রমা, যে ময়দানে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ডাক, সেখানেই আবারো তিনি জনতার মুখোমুখি। আবেগে আপ্লুত, আনন্দাশ্রুতে প্লাবিত বঙ্গবন্ধু। ক্লান্ত তবে অবিচল।
স্বাধীন বাংলাদেশ কেমন হবে? কোন ভিত্তির উপর দাঁড়াবে বাংলাদেশ, আবেগে থরো থরো হয়েও বঙ্গবন্ধু সেই দিনই তা স্পষ্ট করেন। ইতিহাসবিদ ড. মেজবাহ কামাল বলেন, ‘মিলিয়ন ওভার যে পিপল, সেই মানুষের সমাবেশে তিনি যে বক্তৃতা দিলেন। কোন লিখিত ছিল না। সেটা ছিল তার প্রাণের ভিতর থেকে উৎসারিত। তার রাজনৈতিক দিক-দর্শন যা বাংলাদেশের দিক-দর্শন হয়ে উঠবে সে কথা তিনি কিন্তু বলেছেন।
দীর্ঘ কারাভোগের পরেও পরিবার নয়, বঙ্গবন্ধু ফিরেছিলেন তার প্রিয় জনতার কাছেই। মেজবাহ কামাল আরো বলেন, তিনি মুক্তি পেয়ে স্বজনের কাছে যেতে পারতেন, বাড়িতে যেতে পারতেন। অনেকে হলেই তাই করতেন। কিন্তু (বঙ্গবন্ধু) তিনি পরিবারের আগে স্থান দিলেন জনগণকে। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে।
Development by: visionbd24.com