শেখ হাসিনা জেনেশুনেই লিপিকে সংরক্ষিত আসনে এমপি মনোনীত করেছিলেন, আমি লিপির হাজব্যান্ড, বিএনপি করি, এটা তার অজানা নয়। আর বিএনপি কোনো নিষিদ্ধ দল নয় যে, এটা করা যাবে না। লিপি তার যোগ্যতায় দল থেকে এমপির মনোনয়ন পেয়েছিল। নিজ স্ত্রী হিসাবে নয়, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে আমি লিপিকে চিনি। লিপি তো হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতা নয়। পারিবারিকভাবে সে আওয়ামী পরিবারের সন্তান।
দলের প্রতি সে অসম্ভব ডেডিকেটেড। শেখ হাসিনার দুঃসময়ে লিপি ও আমি তার পাশে থেকে দল করেছি। পরে আমি সরে এসেছি, জীবনবাজি রেখে লিপি আজও আওয়ামী লীগ করছে। খুলনার মেয়ে শিরিনা নাহার লিপি। বাবা প্রয়াত এম এ বারি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বঙ্গবন্ধুর জামানায় এমএনএ ছিলেন। তারই মেয়ে লিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের দু’-দুবার সভাপতি ছিলেন। লিপি বর্তমানে যুব মহিলা লীগের দ্বিতীয় সহ-সভাপতি। রাজনৈতিক নিয়োগে বিটিভির পরিচালক।
এর আগে শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক ছিলেন।যুব মহিলা লীগের নেত্রী লিপি এবার দল থেকে সংরক্ষিত আসনে এমপি মনোনীত হয়েও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজলের স্ত্রী বিধায় মনোনয়নপত্র জমাদানের মুহূর্তে এমপি হওয়া থেকে ছিটকে পড়েন।
সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুকে লিপিকে নিয়ে আলোচনার ঝড় বয়ে যায়। একপর্যায়ে বিষয়টি টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে যায়। স্বামী বিএনপি নেতা হওয়ার সুবাদে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফলে শেষ মুহূর্তে লিপিরই দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী যুব মহিলা লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মমতা নেহা লাভলীকে শেষমেশ দল থেকে এমপি মনোনয়ন দেয়া হয়। লাভলি সোনালী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুভাষ সিংহ রায়ের স্ত্রী।
গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ’৮০-এর দশকের কিংবদন্তি ছাত্রনেতা, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল জানান, ’৯৬ সালে আমরা বিয়ে করেছি। বিয়েতে সাবেক মন্ত্রী আমু ভাইসহ আওয়ামী লীগ, বিএনপির অনেক নেতাই এসেছিলেন। আমাদের বিয়ের খবর নেত্রীও জানতেন। লিপি নিজে নেত্রীকে গিয়ে বিয়ের দাওয়াত দিয়ে আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে। আমার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে সেটাও লিপি বলেছে নেত্রীকে।
সজল জানান, ২৩ বছর ধরে আমাদের দাম্পত্য জীবন চলছে। লিপিকে আজ অবধি তার নীতি, আদর্শ, লক্ষ্য থেকে সরাতে পারিনি। ’৮০-এর দশকে আমি ছাত্রদল করেছি, ’৯১ সালে আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছি। ’৯৪ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগ করেছি। এই সময়ে আমি জেলে চলে গেলে আমাকে ছাত্রলীগ তথা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করে। সেই অভিমানেই আমি দল ছাড়ি।
লিপির মনোনয়ন বাতিল প্রসঙ্গে সাবেক ছাত্রনেতা সজল জানান, এ ব্যাপারে আমি বা লিপি বিন্দুমাত্র বিব্রত নই। আমাদের সময়কার ছাত্র রাজনীতি, বিশ্ববিদ্যালয়, রাজনৈতিক জীবনের যারা প্রতিপক্ষ ছিল সবাই এসে একবিন্দুতে মিলিত হয়ে লিপিকে এমপি হতে দেয়নি। নানামুখী ষড়যন্ত্র করেছে। সজল বলেন, যারা আমার সঙ্গে ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছিল তারা আজ অনেকেই আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা। নাম বললে অনেকেই লজ্জা পাবেন।
তিনি বলেন, ফেসবুকে ভরে গেছে, আমি কাদের মোল্লার আইনজীবী ছিলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি, চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি। কেউ এসে প্রমাণ করুক, আমি তার আইনজীবী ছিলাম।
সজল বলেন, রাজনৈতিকভাবে এখানে দুই পরিবার রাজনীতি করে। বঙ্গবন্ধুর পরিবার আর জিয়ার পরিবার। দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে আত্মীয়তা কি নতুন কিছু? বিএনপি নেতা টুকু ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে শেখ সেলিমের পরিবারে বিয়ে হয়েছে। একই ভাবে উপদেষ্টা গওহর রিজভী আর বিএনপি নেতা আব্দুল আওয়াল মিন্টু বৈবাহিকসূত্রে আত্মীয়। মওদুদ ভাইয়ের সঙ্গে তৌফিক-ই-এলাহীর আত্মীয়তা রয়েছে। শেখ হেলালের জামাই পার্থ ৪ দলের শীর্ষনেতা। আমাদের শ্যামার বিয়ে হয়েছে আওয়ামী পরিবারে। লিপি এমপি হতে পারেনি কিন্তু আমাদের বন্ধন, বন্ধুত্ব, সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।
কৌতুক করে সজল জানান, লিপি ও আমি দুজন দুই আদর্শ লালন করেছি, আর সুভাষ সিংহ রায় ও লাভলী দুজন দুই ধর্ম লালন করেছে, লিপি সফল হতে পারেনি, লাভলী সফল হয়েছে। একই সংসারে আলাদা ধর্ম পালনে দোষ নেই কিন্তু আলাদা দল করলে লিপির বেলায় দোষ? সজল বলেন, আমি তো একসময়ে ছাত্রলীগ করতাম, জাতীয় পার্টি করেছি, সেটা কিন্তু ফেসবুকে আসেনি, আমি বিএনপি করছি সেটাই এসেছে।
খালেদা জিয়াকে মা ডাকা প্রসঙ্গে সজল জানান, এটা কি কোনো অন্যায় কিছু? সম্মান করে তাকে মা ডেকেছি, আমার মাকেও আমার অনেক বন্ধু, ছোট ভাই মা ডাকে। আমি যখন ছাত্রলীগ করেছি তখন শেখ হাসিনাকে হাসু আপা বলে ডেকেছি।
হরিণের শত্রুই হরিণের মাংস উল্লেখ করে সজল বলেন, ফেসবুক আমাকে আমাদের ধ্বংস করেছে এমনটি মনে হলেও দেশ-বিদেশে আমাদের পরিচিতি আবারো বেড়েছে। অনেকে এমবি খরচ করে পোস্ট দিয়েছে, আমাদের ২৩ বছর আগের বৈবাহিক জীবনের ইতিহাস তুলে এনেছে, ইউজাররা চাইলে ইন্টারনেটে এমবি কিনে দিতে রাজি আছেন আলোচিত এই বিএনপি নেতা। সজল দাবি করেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি নিজে প্রগতিশীল, জামায়াত-শিবিরের কোনো মামলাই তিনি আইনজীবি হিসেবে নেন না।
Development by: visionbd24.com