গ্যাসের দাম বাড়নো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাভারের বিরুলিয়া এলাকায় অবস্থিত ব্র্যাক সিডিএম এ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আয়োজনে তিন দিন ব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল সম্মেলন অন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং-২০১৯ এ যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়নোর বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি আলোচনা করছে, বিভিন্ন কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে। ভোক্তারাও তাদের অনুরোধ ও মন্তব্য দিয়েছেন। তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে গ্যাসের পরিমাণ সীমিত— সরকার এলএমজি গ্যাস আমদানি করছে আর এলএমজি গ্যাস দেশীয় গ্যাসের দামের চেয়ে বেশি। দেশীয় ও আমদানি করা গ্যাসের মধ্যে দাম সমন্বয় করে দিলে ভোক্তাদের জন্য ব্যয়বহুল হবে না। দেশে নতুন গ্যাস আসলে প্রথমে বিদ্যুৎ, পরে শিল্প ও তারপরে সার কারখানায় দেয়া হবে। এরপর বাসা বাড়িতে গ্যাস দেয়ার চিন্তা করা হবে।
এদিকে, ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাসের দাম আপাতত না বাড়ালেও তিতাসের কোনো লোকসান হবে না বলে মনে করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি। আর গ্যাসের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে তিতাস গ্যাস। মঙ্গলবার দুপুরে তাদের এ প্রস্তাবের উপর গণশুনানি করে বিইআরসি। প্রস্তাবে আবাসিকে গ্যাসের দাম একচুলার ক্ষেত্রে ১৩৫০ টাকা এবং দুই চুলার ক্ষেত্রে ১৪৪০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি গ্যাস বিতরণ চার্জও দ্বিগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব তাদের।
এ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি কোনো ধরনের চার্জ না বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়ে জানায় গ্যাসের দাম আপাতত না বাড়ালেও তিতাসের লোকসান হবে না। আমদানিকৃত এলএনজির উচ্চ ব্যয় এবং পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে গ্যাসের দাম গড়ে প্রায় ১০৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করে তিতাস গ্যাস। এরমধ্যে আবাসিকে একচুলার ক্ষেত্রে বর্তমানের ৭৫০ টাকা থেকে ৮০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৩৫০ টাকা এবং দুই চুলার ক্ষেত্রে বর্তমানের ৮০০ টাকা থেকে ১৪৪০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। এর পাশাপাশি প্রতি ঘনমিটারে বিতরণ চার্জ ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৫৬ পয়সা করার প্রস্তাবও উপস্থাপন করেছে তিতাস গ্যাস।
গণশুনানিতে বলা হয়, বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি ঘনমিটার এলএনজি যোগ হচ্ছে। আগামী এপ্রিল নাগাদ প্রায় ৭ কোটি ঘনমিটার উচ্চমূল্যের এলএনজি যোগ হবে। তখন বর্তমানের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের বিতরণ ব্যয় দাঁড়াবে বর্তমানের ৭ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে দ্বিগুণেরও বেশি। কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির হিসেবে, বর্তমান দামেও প্রতি ঘনমিটারে তিতাসের ১৮ পয়সা করে লাভ হচ্ছে। আগামী এপ্রিলে প্রায় ৭ কোটি ঘনমিটার এলএনজি যোগ হলে, এ ব্যয় প্রতি ঘনমিটারের ১২ টাকার কাছাকাছি চলে যাবে। আর বিতরন চার্জ যা আছে এ থেকেও বাড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই।
আর ভোক্তা প্রতিনিধিরা বলেন, যে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগই হলো না, আগে থেকেই সে গ্যাসের দাম নেয়া অন্যায়। তাছাড়া রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিতাসের ব্যবসা করার কোনো সুযোগ নেই। উপরন্ত চুরি দুর্নীতি এবং নিরচ্ছিন্ন গ্যাস না দিয়েও গ্রাহকের কাছ থেকে পূর্ণ দাম আদায় করার কোনো সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত দাম বাড়ানোর যেকোনো ধরনের শুনানি আইন বহির্ভূত ও অন্যায় বলেও অভিযোগ করেন তারা। দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা না থাকলেও কিছু ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের লাভের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে বলেও গণশুনানিতে অভিযোগ উঠেছে।
Development by: visionbd24.com