গত ১২ জুন ২০২১-এ বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স এর দুটি বিমান চীনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যায়। চীন থেকে তারা বয়ে নিয়ে আসে চীনা কম্পানি সিনোফার্মের তৈরি করা ৬ লাখ কোভিড টিকার ডোজ। এটি ছিল চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে পাঠানো উপহার। এর আগে মে মাসের ১২ তারিখে বাংলাদেশ আরও পাঁচ লাখ এমন টিকা চীনের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিল। তবে এই তথাকথিত উপহার আসলে কিছুটা গলার কাঁটা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এমনটা প্রতিয়মান হওয়ার কারণ হলো চীনা কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত কড়াকড়ি ও চুক্তির ক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব। চীনা কর্তৃপক্ষের পরিবহন সংক্রান্ত জটিলতা এবং মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণে উপহার সংক্রান্ত ধারণাটি ভেস্তে গেছে।
অন্যদিকে, আমরা ঘদি ভারতীয় সরকারের ভ্যাকসিন নীতির উপর দৃষ্টিপাত করি, তাহলে বলা যায়, ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে তাদের সিরাম ইনস্টিটিউটের (এসআইআই) তৈরি করা টিকা, কোভিশিন্ড, যেন সত্যিকারের উপহার হিসেবে বন্টন করেছিল প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে। বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল এবং শ্রীলংকা টিকার এই উপহার সামগ্রী পেয়ে উপকৃত হয়। তবে দুর্ভাগ্যবশত ভারতে করোনা রোগের দ্বিতীয় ঢেউয়ে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে করে তাদের নিজেদের দেশেই করোনা টিকার ব্যাপক অভাব দেখা দেয়। ফলে, অনেকটা অভ্যন্তরীণ চাপের কারনে ভারতীয় সরকার দেশের না। স্বাভাবিকভাবেই বৈদেশিক ক্ষেত্রে রপ্তানির জন্য উন্মুক্ত হয়েছিল যে কার্যক্রম সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ভারত সরকার ‘ভ্যাকসিন মৈত্রী’ নামে যে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করেছিল তার প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য, সেটি নিরাশভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে বাংলাদেশ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর জন্য সেই সময় টিকার মারাত্মক প্রয়োজন ছিল। তারা যেকোন উৎস থেকে টিকা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে পড়ে। এমন এক পরিস্থিতিতে এ তিনটি দেশ চীনা উৎসের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কারণ সেটি ছিল একমাত্র অবলম্বন, যার খুব প্রয়োজন ছিল এ দেশগুলোর জন্য। এছাড়া তাদের জনগণকে বাঁচাবার আর কোনো উপায় ছিল না। এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন বিভাগ সিনোফার্ম ভ্যাকসিন জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োগের ব্যাপারে অনুমোদন জারি করে। ভারতের অভ্যন্তরীণ সংকটের সুযোগে চীনা কর্তৃপক্ষ নয়াদিল্লির একদম বিক্রয়ের প্রস্তাব করে। এগুলো ছিল সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের উৎপাদিত টিকা। মে মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ সরকার চীনের অনুমোদন দেয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার চীনের সংশ্লিষ্ট কোম্পানি, সিনোফার্মের সঙ্গে টিকা ক্রয়ের ব্যাপারে চূড়ান্তভাবে চুক্তি সম্পাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। চীনের সাথে সম্পাদিত সেই চুক্তিতে কিছু কঠোর বিধি নিষেধ আরোপিত ছিল। চুক্তিতে কঠোরভাবে আরোপিত ধারাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বাংলাদেশ সরকার বা বাংলাদেশের কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চীন থেকে ক্রয় করা টিকার দামের ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে পারবে না। এমনকি কতগুলো টিকা কেনা হচ্ছে, সে ব্যাপারেও খোলাসা করে কোথাও কিছু বলতে পারবে না। কিন্তু ইতিমধ্যে বাংলাদেশের কেবিনেট ডিভিশন এর অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আক্তার মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় জানিয়ে দেন যে চীন থেকে ক্রয় করা প্রতি ডোজ টিকার দাম পড়বে ১০ মার্কিন ডলার। এভাবে মুল্য সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর বেশ কিছু ইস্যু তৈরি হয়ে যায় দক্ষিণ এশিয়ার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নেপাল এবং আীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটা প্রতীয়মান হয় যে চীন আসলে দক্ষিণ এশিয়ার একেক দেশে একেক দামে তাদের টিকা সরবরাহ করার উদ্যোগ নিয়েছিল। বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে প্রতি ডোজ এস্ট্রোজেনেকা টীকা পাঁচ ডলার করে কিনেছিল। চীনের কাছ থেকে টিকা কাণ্ডের পর ব্যাপারটি এভাবে ব্যাখ্যা করাই যায়, বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে দ্বিগুণ মুল্যে টিকা কিনতে যাচ্ছিল। শ্রীলংকার ক্ষেত্রে ভারত থেকে আমদানিকৃত টিকার দাম সাড়ে পাঁচ ডলারের মত, যা ছিলো চীন থেকে কেনা টিকার দামের এক তৃতীয়াংশের মত।
এদিকে, নেপালের ক্ষেত্রে ভারত থেকে কেনা এস্ট্রোজেনেকা প্রতি ডোজ খরচ হয়েছিল ৪ ডলারের মত। কারণ তারা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কিছুটা কাছাকাছি ছিল। তাই পরিবহন খাতে খরচ কিছুটা কম হওয়াতে, তারা অপেক্ষাকৃত কম মুল্যে টিকা পেয়েছিল। অথচ নেপালিদের ক্ষেত্রে দুই ডোজ চীনা টিকার খরচ পোহাতে হচিছল ২০ ডলারের ওপরে। ইতিমধ্যে নেপালি গণমাধ্যমে চীন থেকে কেনা টিকার ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। সেসব তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে জানা যায় যে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘ওয়ান ই’ নেপালি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গাওয়ালি এর উপরে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন যেন নেপাল কোন প্রমাণ ছাড়াই ২০ ডলার মুল্যে তাদের টিকা কিনে নেয়। এখন এটা বোঝা যাচ্ছে যে, মুল্য সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করার পর বাংলাদেশের উপরে চীনা কর্তৃপক্ষ বেশ রুষ্ট হয়ে রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এর সঙ্গে একটি বৈঠকে মিলিত হন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে জনাব মাসুদ বিন মোমেন চীনা রাষ্ট্রদূত এর মাধ্যমে চীন সরকারের কাছে এমন অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আব্দুল মোনেম জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন ইস্যুতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি বলেন মুল্য জানানোর ইস্যুতে চীনা কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত অখুশি হয়েছেন। তার বক্তব্যে টিকা কেনা সংক্রান্ত আরেকটি তথ্য বেরিয়ে আসে। সেটি হচ্ছে টিকা ক্রয় করার পরে বাংলাদেশ পর্যন্ত পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে অস্বচ্ছ ধারণা।
তিনি উল্লেখ করেন যে, চুক্তিতে ঢাকা পর্যন্ত টিকা পরিবহনের ব্যাপারে কোন ধারার উল্লেখ নেই। যার অর্থ হলো বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এসি ১৩০- জে বিমানটিকে চীনে গিয়ে করোনার ভ্যাকসিন এবং এডি সিরিঞ্জ বয়ে নিয়ে আসতে হবে। এবার চিনা টিকা সরবরাহ পদ্ধাতির সাথে ভারতীয় টিকা সরবরাহ পদ্ধতির তুলনা করা যাক। এবছর জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ ভারত একটি বিশেষ বিমানে করে তাদের ২০ লক্ষ টিকার উপহার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছে দিয়ে যায়। গতবছর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ঢাকা সফরের সময় টিকা প্রাপ্তির ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রাধান্যর উপর জোর দিয়ে বক্তব্য রাখেন। এবছর মার্চ মাসের ২৭ তারিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সফর উপলক্ষে ভারত বাংলাদেশকে আরো ১২ লক্ষ টিকা উপহার হিসেবে প্রদান করে। এছাড়াও ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে তিন কোটি ডোজ টিকা প্রদানের ব্যাপারে চুক্তি সম্পাদন করেন। ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশ চুক্তির ভিত্তিতে ২০ লাখ টিকার একটি চালান গ্রহণ করে। ইতিমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারত লল্ডভন্ড হয়ে পড়ে। এ সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে পাঠানো তাদের শেষ চালান এসে পৌছায়। এই চালানে এক লাখ টিকা ছিল। এরপর মারাত্মক অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে তাদের টিকা ঘাটতি চরম আকার ধারণ করে। ফলশ্রুতিতে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ঘটনাচক্রে আরো সংযুক্ত করা যায় গত বছরের একটি ঘটনা। সে সময় চীনা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে সুপারিশ করেছিল এই মর্মে ষে, বাংলাদেশ যেন চিনা টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করে। তাদের সুপারিশ ছিল বাংলাদেশ যদি চিনা টিকা নিতে চায়, তবে তাদের এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা উচিত। ঢাকা সেসময় সেই সুযোগ প্রত্যাখ্যান করে। তাতে করে চীনা কোম্পানি জানিয়ে দেয় যে, তারা টিকার দামের ব্যাপারে সেসব দেশকে কোন ছাড় দেবে না, যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। তাই বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাদের দামের ব্যাপারে কোনো মার্জনা করা হবে না। এতে করে ঢাকা দ্রুত টিকার জন্য ভারতের সিরামের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই কোম্পানির কাছ থেকে টিকা সংগ্রহের ব্যাপারে সার্বিক চুক্তি সম্পাদন করে ফেলেন। ইতিমধ্যে চিনা ভ্যাকসিন সার্বিকভাবে একটি বিতর্কের ডামাডোলে পর্যবসিত হয়। পৃথিবীব্যাপী অনেক বিশেষজ্ঞ চিনা ভ্যাকসিনের সক্ষমতার ব্যাপারে যথেষ্ট প্রশ্ন তুলছিলেন। চিনা ভ্যাকসিনকে সে সময় এ সমস্ত বিতর্কের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছিল। এইবার সমালোচনা আরও উসকে দেয় জর্জ গাও, চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রধান।
গত বছর ১১ এপ্রিল তিনি বিবৃতি দেন যে, তারা তাদের তৈরি করা বর্তমান ভ্যাকসিনের ব্যাপারে তৈরি হওয়া সমস্যাগুলো সমাধান করবেন কারণ বর্তমান ভ্যাকসিনটির প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব একটি উচ্চপর্যায়ের ছিলনা। চীনের তৈরি করা সিনোফার্মের ভ্যাকসিন হালেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়। এ বছরেই মে মাসের ৭ তারিখে তাদের টিকার অনুমোদনটি আসে। তাও এই অনুমোদনের আসল উদ্েশ্য ছিল উন্নয়নশীল দেশগুলোর টিকা ব্যবস্থায় সাহায্য করার উদ্দেশ্যে মাত্র। কারণ বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর কারণে টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে একটি মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছিল। উন্নত দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খাচিছিল। আর যেহেতু নিজব্ব টিকা ক্ষেত্রে কোন সম্ভাবনার ক্ষেত্র খুঁজে পাচ্ছিল না। এদিকে চীনের টিকা পরীক্ষার তৃতীয় পর্যায়ের ফল সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত থেকে যাচ্ছিল। পরবর্তীতে চীনে বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে আবিস্কৃত ও উৎপাদিত টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ফল প্রকাশিত হয়ে যায়। তবে এ সংক্রান্ত প্রকাশনায় তেমন কোনো যৌক্তিক তথ্য-উপাত্তের দেখা পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট প্রকাশনায় শুধুমাত্র দুটি টিকার সক্ষমতার সার্বিক হার উল্লেখ করা হয়েছিল। হার ছিল যথাক্রমে ৭৯ এবং ৭২ শতাংশ। কোন প্রমাণ ব্যতিরেকে এই তথ্যের ভিত্তি ছিল শুধুমাত্র চীনের অভ্যন্তরীণ কিছু পরীক্ষার ফল। এবার আমরা ঘদি চিনা ভ্যাকসিন এর ব্যবহারিক প্রয়োগের দিকে তাকাই, তাহলে এর কিছু সমস্যা খুঁজে পাওয়া যায়। উদাহরণরূপ বাহরাইনের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা যেতে পারে। দেশটিতে চীনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় একটি বুস্টার ডোজ এর ব্যাপারে আদেশ জারি করা হয়। কারণ সেখানে সিনোফার্মের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ এর মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার তেমন কোনো বাস্তব প্রমান পাওয়া যাচিছিল না। আবার সেই সময় থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজেকেে কাজ করা চীনা কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক হারে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার হার পরিলক্ষিত হচিছিল। তাদের সবাই চীন থেকেই ভ্যাকসিন নিয়ে এসেছিল। তারপরও চীন থেকে তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে আসে এবং বাংলাদেশে কাজে যোগদানের পর তাদের শরীরে করোনার অস্তিত্ব প্রকাশ পেতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ তাদের করোনার ভ্যাকসিন নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়। কারণ এতে একটি বড় প্রশ্ন চিহ্ন অঙ্কিত হয়ে গিয়েছিল যেআমরা কি তাহলে বেশি দামে কেনা কম সক্ষমতার একটি টীকা এনে দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে ফেলতে যাচ্ছি? এঁ ভ্যাকসিনের আসলে বিশ্বব্যাপী কোনো অনুমোদন ছিল না।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো চীনা ভ্যাকসিন এর ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছিল। তাদের ঘোষণা এমন ছিল যে চিনা ভ্যাকসিন প্রয়োগকারী কোন ব্যক্তিকে তারা করোনা প্রতিরোধী বলে ধরে নিত না। এদিকে আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রবাসী শ্রমিকের ঠিকানা আসলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলি, বিশেষ করে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। বাংলাদেশে প্রেরিত রেমিটেন্সের একটি বিশেষ অংশ আসে এ সমস্ত দেশ গুলো থেকে। তাহলে চীনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে বাংলাদেশে তার প্রবাসী শ্রমিকদের ঞঁ সমস্ত দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে কোন সুবিধা করতে পারত না। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মাথায় রাখা উচিত যে সক্ষমতা, মূল্য এবং পরিবহন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে চীনা ভ্যাকসিন একটি সমস্যা হিসেবেই রয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে তুরষ্ক এবং ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে ব্যতিক্রমী দুটি দেশ যারা এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে। আবার ভ্যাকসিন প্রদানের ক্ষেত্রে চীনা কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের মতন দেশগুলিকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রেখে দিয়েছে কারণ পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তারা এই মুহূর্তে ভ্যাকসিনের মুল্য পরিশোধ করতে সক্ষম হবে না। সবকিছু মিলিয়ে চীনা ভ্যাকসিন পৃথিবীব্যাপী বেশ কিছু প্রশ্নের সম্মৃথীন হচ্ছে। যদিও চীনা কর্তৃপক্ষ এ সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্বব্যাপী বেশকিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে।
অপরদিকে, ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদুত লি জিমিং বাংলাদেশের ভ্যাকসিন চাহিদার ব্যাপারে কটাক্ষ করেছেন। তিনি বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন প্রদানের ক্ষেত্রে লাইনে থাকা শেষ দেশগুলোর একটি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ চীন আসলে বৈশ্বিক চাহিদা মেটানোর দিকে মনোযোগ দিতে বেশি ব্যস্ত। তার দেয়া তথ্যমতে বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন অদানেের বিষয়টি বাস্তব রাপ নিতে পারে এ বছরের শেষের দিকে। তার আগে নয়। তবে এ মুহৃর্তে প্রায় ৬০ টিরও অধিক দরিদ্র দেশ চীনা ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিতে বাধ্য হয়েছে। এখন চীনা ভ্যাকসিনের সক্ষমতার কমতির দিকে যদি আমরা মুল্যায়ন করি, তাহলে হতে পারে এটি বর্তমান মহামারীর পরিস্থিতিকে আরো অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রে চীনা কোম্পানির ভ্যাকসিন শেষ পর্যন্ত একটি দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি বয়ে আনতে পারে। এর কারণ হলো তাদের ভ্যাকসিনের অনিশ্চিত সক্ষমতা এবং সার্বিক চুক্তির ক্ষেত্রে একটি জলঘোলা পরিস্থিতি। তবে বাংলাদেশের আর কি কোন বিকল্প উৎস আছে? বাংলাদেশের জন্য এখন পরিস্থিতি হলো মুল্য আধিক্য, পরিবহন সংকট এবং চুক্তির অব্চ্ছতার সত্বেও বাংলাদেশ চীনা কোম্পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। চীনা কোম্পানী সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশকে একঘরে করে ফেলছে না তো? বাংলাদেশ আসলে ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক, কোয়াড গ্রুপের প্রতি সহানুভূতিশীল অবস্থান এবং অনিচ্ছাকৃত ভাবে চিনা ভ্যাকসিনের মূল্য প্রকাশ সংক্রান্ত কারণগুলোতে- চীনের প্রতিহিংসার সম্মুখীন হচ্ছে না তো?
Development by: visionbd24.com