৩১ মে (বুধবার) বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমরা তামাক নয়, খাদ্য চাই’। তামাক উৎপাদনে কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচনও এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
বিকল্প খাদ্য ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ও পুষ্টিকর ফসল চাষে তামাক চাষিদের উৎসাহিত করতে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘গ্রোফুড- নট টোব্যাকো’। তামাক নয়, খাদ্য ফলান এই স্লোগানে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপন করা হবে।
মঙ্গলবার (৩০ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মানস-মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা আয়োজিত অনুষ্ঠানে মানস’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী এসব কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘তামাক চাষ কৃষকের স্বাস্থ্য, মাটির স্বাস্থ্য এবং সার্বিকভাবে গোটা জনস্বাস্থ্য ও পৃথিবীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য সঙ্কট সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখে তামাক।
বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান খাদ্যসঙ্কটের পেছনে সংঘাত-যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারির অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবের পাশাপাশি তামাক চাষের একটি প্রভাব রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশের প্রায় চার মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়।
ডা. অরূপরতন বলেন, ‘শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ভুক্ত দেশ। অন্যদিকে, পৃথিবীব্যাপী উৎকৃষ্টমানের জমি ক্রমবর্ধমানহারে তামাকচাষে ব্যবহৃত হওয়ায় খাদ্য ফসলের জমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এসব জমি খাদ্যফসল ফলানোর কাজে ব্যবহার করা গেলে লাখ লাখ মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্কট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ খুবই কম। মাত্র তিন কোটি ৭৬ লাখ সাত হাজার একর। অথচ তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। বিশ্বের মোট তামাকের এক দশমিক তিন শতাংশই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে।’
ডা. অরূপরতন বলেন, ‘বাংলাদেশে তামাকজনিত অসুস্থতায় প্রতি বছর এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। দেশে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় ও কর্মক্ষমতা হ্রাসের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের এসব ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করেই তামাক নিয়ন্ত্রণকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের অন্তর্ভুক্ত (টার্গেট ৩ এ) করা হয়েছে। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তামাকের সরবরাহ ও চাহিদা কমিয়ে আনাই হতে পারে তামাকের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার সঠিক উপায়।’
তামাকবিরোধী সংগঠন মানস এর সভাপতি আরও বলেন, ‘তামাক চাষের ক্ষতি থেকে দৃষ্টি সরানোর জন্য তামাক কোম্পানিগুলো প্রায়শই নিজেদের অত্যন্ত পরিবেশ বান্ধব হিসেবে উপস্থাপন করে। তথাকথিত সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মসূচির (সিএসআর) মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের ঘটানো ক্ষতি আড়াল করে ও দায় এড়ানোর চেষ্টা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তামাক জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য হুমকি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করনের মাধ্যমেই এসব ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের ঘোষণা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’
এসময় মানসের অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘যেসব জেলায় তামাক চাষ হচ্ছে, সেই সব জেলায় পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন সংকট রয়েছে। তামাক চাষে কোম্পানিগুলো লাভবান হচ্ছেন কিন্তু চাষিরা লাভবান হচ্ছেন না। তামাক চাষে আমাদের হালদা নদী এখন মরানদীতে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর সাত শতাংশ তরুণ নেশায় আসক্ত হচ্ছে, মেয়েরা স্তণ ক্যান্সারের আক্রান্ত হচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, ‘ইতিপূর্বে বলা হয়েছে ডায়াবেটিকস রোগ বংশগত ছিলো । কিন্ত সম্প্রতি এক গবেষণা বলছে যে সব তরুণ –তরুণী ধূমপানে আসক্ত তাদেরও ডায়াবেটিকস হচ্ছে।’
বক্তারা বলেন ,তামাক নির্মুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এফসিটিসি’র আলোকে আইন সংশোধনে ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই মানসের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে আইনের দুর্বলতা এবং আইন বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূরীকরণে কয়েকটি প্রস্তাব সুপারিশ করা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি’ পাস করা, কৃষকদের তামাকের বিকল্প ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা, দেশব্যাপী জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিসহ সর্বমোট ১২টি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে।
Development by: visionbd24.com