একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা নিয়ে লড়তে ২৩০ আসনে দলের মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জোট শরিকদের জন্য রাখা হয়েছে ৭০টি আসন। জোট শরিকরাও সিগন্যাল পাওয়া আসনগুলোয় দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন নিশ্চিত করছে।
গতকাল মহাজোটগত প্রার্থী ঘোষণার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। কৌশলগত কারণে সময় নেওয়া হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী দেখেই চূড়ান্তভাবে মহাজোটের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। এই কৌশলী প্রক্রিয়া অনুসরণ করায় স্বস্তি ফিরেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ধারণা করা হচ্ছিল, ৭০টি আসন ফাঁকা রাখায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী বা তাদের কর্মী-সমর্থকরা নিজ এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ করবেন। কিন্তু তা হয়নি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের এই কৌশলে জাতীয় পার্টিসহ জোট শরিকরাও খুশি হয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, শেষ মুহূর্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয় তা এবার হবে না।
এতে জোটের সব নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়ে জোট প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবেন। এক্ষেত্রে ভোট নিয়ে জোটের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হোক বা কোনো ধরনের সম্পর্কের অবনতি ঘটুক তা চান না শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দলের মনোনয়নেও বেশ কৌশলী ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি অভিজ্ঞ মাঝিদের হাতেই তুলে দিয়েছেন নৌকা। এসব প্রার্থী যেমন নির্বাচনী কৌশলে সিদ্ধহস্ত, তেমনি পথ-ঘাট-মাঠ চেনা ও জানা। তাদের রয়েছে বিশাল কর্মী বাহিনী। তাছাড়া বর্তমান এমপি হিসেবেই তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। জোট নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে মহাজোট নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশাল ইমেজকে কাজে লাগিয়েই তারা ভোটের মাঠে মানুষের মন জয় করতে চান।
টানা দশ বছরে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর বিশাল ইমেজ, উন্নয়ন-সাফল্য, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তির মাধ্যমেই তারা বাজিমাত করতে চান ভোটের বাক্সে। জানা গেছে, নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জোটের নেতা-কর্মীরা সমানভাবে খুশি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের মনোনয়ন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলেও এবার হবে না বলে মনে করছেন নেতারা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া সঠিক হয়েছে বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। এ প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন ভালো হয়েছে। নৌকা পেতে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকলেও প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়নি। এ ছাড়া জোট শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ফলে এবার মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে মহাজোটে স্বস্তি ফিরছে।’ মহাজোটের অন্যতম বড় শরিক দল জাতীয় পার্টি। বর্তমান সংসদের এই বিরোধী দল মহাজোট করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভোট করবে। আওয়ামী লীগের সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় পার্টিকে ৪০টির ওপর আসন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রার্থী চূড়ান্ত করতে জোটের প্রধান এই দুই দলই কৌশল নিয়েছে। এতে করে মহাজোটের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর ও সুদৃঢ় হবে বলে মনে করেন দলগুলোর নেতারা।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি উভয় দল কৌশলে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। যদিও কাজটি করা কঠিন। কিন্তু মহাজোট নেত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে কঠিনকে সহজ করেছেন। এতে করে জোটের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। সম্পর্কও আরও সুদৃঢ় হবে। রাজনৈতিক সৌহার্দ্য বাড়বে।’ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শরিকদের জন্য আসন ফাঁকা রেখে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করার প্রস্তাবটা আমাদেরই ছিল। আওয়ামী লীগ তাই করেছে। এতে অতীতের মতো মহাজোট প্রার্থীদের ঝামেলা পোহাতে হবে না। আসন ভাগাভাগিতে স্বস্তিই ফিরেছে বলে মনে করছি।’
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। সে কারণে দলীয় মনোনয়নে অভিজ্ঞ প্রার্থীদের ওপর আস্থা রেখেছেন দলের হাইকমান্ড। অন্যদিকে জোট শরিকদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন বাড়াতে চায় না দলটি। তাই দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে শরিকদের জন্য ৭০টি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। গতকাল জোটগত প্রার্থী ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু কৌশলগত কারণে তা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমরা কৌশলে মার খেতে চাই না, কৌশলে এগিয়ে যেতে হবে। এতে আমরা কারও থেকে পিছিয়ে থাকতে চাই না। সে কারণেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
তবে আমরা প্রার্থীদের চিঠি দিয়েছি।’ জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে রয়েছে ১৩টি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি-জেপিকে এবারও আসন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভোটের শরিক বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে আসন দেওয়া হয়েছে। শরিক জোটে যারা আসন পাবেন না তারাও অখুশি হননি। এ প্রসঙ্গে গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ শিকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগ। যেখানে যাকে দিয়ে আসন উদ্ধার হবে সেখানেই সে প্রার্থীই বেছে নেওয়া হয়েছে।
বর্তমান ১৪ দলীয় জোট বা মহাজোটের যেসব প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাদের বিজয়ী করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে। আমি বিশ্বাস করি, জোটের শরিক যারা আসন পায়নি, তারা আগামীতে মহাজোট ক্ষমতায় এলে সরকার গঠনের সময় মূল্যায়ন পাবে।’
Development by: visionbd24.com