মহান মে দিবস; শ্রমজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন

রবিবার, ০১ মে ২০২২ | ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ | 125 বার

মহান মে দিবস; শ্রমজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন

মহান মে দিবস আজ (০১ মে)। বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণার এক দিন। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ঐতিহাসিক এই দিনটিকে বিশ্বব্যাপী মে দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওই দিন তাদের আত্মদানের মধ্যদিয়ে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
সারা দুনিয়ার মতো আমাদের দেশেও এ দিনটি পালিত হচ্ছে যথাযথ মর্যাদায়। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের শ্রমিকরা ১৮৮৬ সালের পয়লা মে বুকের রক্ত দিয়ে নিজেদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। রক্তাক্ত আন্দোলনের মুখে মালিকপক্ষ ন্যায্য মজুরি ও দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সীমা মেনে নিতে বাধ্য হয়। পয়লা মের পথ ধরে স্বীকৃত হয় শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার। শিল্প ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিক দরকষাকষি বৈধতা পায়।

১৮৮৬ সালের রক্তক্ষরণের এ দিনটি দুনিয়ার দেশে দেশে শ্রমিক সংহতির দিন হিসেবেও পালিত হয়ে আসছে। বুলেটবিদ্ধ শ্রমিকদের রক্তে ভেজা শার্ট আন্দোলন-সংগ্রামের লাল পতাকা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে শ্রমজীবী মানুষের কাছে। ১৩৫ বছর আগে শিকাগো শহরে মালিকপক্ষের নৃশংসতার শিকার শ্রমিকরা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেন শ্রমজীবী মানুষের শৃঙ্খল ছাড়া হারানোর কিছু নেই। মহান মে দিবসের পথ ধরে পরে সংঘটিত হয় রুশ বিপ্লব। চীন, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া, পূর্ব ইউরোপ, কিউবাসহ বিভিন্ন দেশে শ্রমিক শ্রেণির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। মে দিবস বিশ্বজুড়ে সমাজবাদী চেতনারও বিকাশ ঘটায়। পুঁজিবাদের মানবিক বিকাশেও মে দিবসের অবদান অনস্বীকার্য। শ্রমিকদের ঠকিয়ে কিংবা তাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে পুঁজির সুষ্ঠু বিকাশ যে সম্ভব নয় তা এখন ধনবাদীরাও স্বীকার করেন। নারীমুক্তির ক্ষেত্রেও মে দিবসের চেতনা অনন্য ভূমিকা রেখেছে।

শ্রমিক বঞ্চনার ইতিহাস নতুন নয়। সব যুগে, সব সমাজে এটি ছিল। শ্রমিকের ঘামে মালিকের প্রাসাদোপম অট্টালিকা তৈরি হলেও অনেক শ্রমিককে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। তারা দিন-রাত অক্লান্ত শ্রম দিয়েও জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারে না। অনেক সময় তারা প্রাপ্য অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নামতে বাধ্য হয়।

বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে পুঁজির দ্রুত বিকাশ ঘটছে। পোশাকশিল্পে স্পুটনিক গতিতে এগিয়েছে আমাদের দেশ। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে ৪০ লাখ শ্রমিকের ভাগ্য; যার অধিকাংশই নারী। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আরেকটি প্রধান খাত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। প্রবাসীর সিংহভাগই বিদেশে শ্রম দিয়ে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছে। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে শ্রমজীবীদের অধিকার আদায়ে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের অগ্রগতির স্বার্থে উৎপাদন ক্ষেত্রে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সুষ্ঠু সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

Development by: visionbd24.com