‘স্বাস্থ্য খাতকে কল্যাণমুখী করতে বাজেট বাড়াতে হবে’

শনিবার, ১০ জুন ২০২৩ | ১০:১৬ অপরাহ্ণ | 23 বার

‘স্বাস্থ্য খাতকে কল্যাণমুখী করতে বাজেট বাড়াতে হবে’

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে চলতি বাজেটে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থ বছরের বাজেট বরাদ্দ ছিলো ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। মোট বাজেটের খাতওয়ারি বরাদ্দের নিরিখে এবার স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কমেছে। গত বছরের মোট বাজেটের বিপরীতে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ ছিলো পাঁচ দশমিক চার শতাংশ। চলতি বাজেটে ধরা হয়েছে মাত্র পাঁচ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় উন্নয়ন ব্যয় ১৭ শতাংশ কম প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের বিষয়ে কিছুটা অসন্তষ্টি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য বিভাগ বরাদ্দের ২৯ শতাংশ খরচ করতে পারেনি। এ অর্থ বছরের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ১৭ কোটি টাকা, খরচ হয়েছিল ১০ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাজেটে বরাদ্দের প্রায় ৪২ শতাংশ ফেরত যায়। ২০২০-২১ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। সে সময় ৬ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। এর ৫ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা খরচ হয়। বরাদ্দের ২৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ টাকা অব্যবহৃত থাকে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। ব্যয় করা হয় ৭ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। অব্যবহৃত অর্থের পরিমাণ ১১ দশমিক ২২ শতাংশ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবা খাতে বরাদ্দ কমে গেলে, সরকারি স্বাস্থ্য সেবার মান খারাপ হবে। মানুষ চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালমুখী হবে, এতে আবার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পেতে ব্যক্তিগত ব্যয় বেড়ে যাবে এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবায় সরকারের অঙ্গীকার রয়েছে সেটিও ব্যাহত হবে। তাই বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি, বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহারের জন্য দক্ষ জনবল প্রয়োজন। স্বাস্থ্য খাতে সার্বিকভাবে বাজেট প্রায় তিন শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে মুদ্রাস্ফীতি রয়েছে ৬ শতাংশ যেটা সরকার নিজেই স্বীকার করছে। বাস্তবে মুদ্রাস্ফীতি আরও অনেক বেশি। সুতরাং গত বছরের বাজেট দিয়ে যে পরিমাণ কাজ করা গিয়েছিল, এবারের বাজেট দিয়ে সে পরিমাণ কাজ করা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে এখন যে পরিমাণ অর্থ প্রস্তাব করা হয়েছে তার তিনগুণ বরাদ্দ দেওয়া উচিত। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এটি ১২ থেকে ১৫ শতাংশ হওয়া উচিত। বাজেট বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেটিকে কার্যকরভাবে ব্যয় করতে হবে। কিন্তু সে খরচ করার সক্ষমতা আমাদের নেই।’

স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ এবং ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের স্বাস্থ্য খাতকে কল্যাণমুখী এবং সার্বজনীন করতে চাই তাহলে বাজেট অবশ্যই বাড়াতে হবে। বাজেটে বরাদ্দকৃত টাকা শতভাগ কিংবা শতভাগের কাছাকাছি ব্যয় করতে হবে।’

চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে বরাদ্দকৃত বাজেটের প্রায় ৩৩ শতাংশ খরচ করা হয়েছে। বাকি মাসে হয়তো বিভিন্ন বিল এবং খরচ মিলে এটা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ হবে। অর্থাৎ বরাদ্দকৃত টাকার ২০ শতাংশই যখন খরচ হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘অথচ স্বাস্থ্য খাতে আমাদের ব্যক্তিগত ব্যয় ৬৯ শতাংশ। এর দুটি মূল কারণ চিহ্নিত হয়েছে, একটি হচ্ছে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, দ্বিতীয়ত সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধপত্র না দিয়ে বাইরে থেকে কেনার জন্য প্রেসক্রিপশন করে দেওয়া।’

ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমে গেলে মানুষের ব্যক্তিগত খরচ আরও বেড়ে যাবে। বরাদ্দকৃত টাকা খরচ হয় না কেন সেই কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। কারণগুলো উদঘাটন করে যদি নিরসন না করা হয়, তাহলে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ হবে না। এটি চলতে থাকলে সরকারি খাত থেকে জনগণ স্বাস্থ্য সেবায় বঞ্চিত হবে, একপর্যায়ে বেসরকারি চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। সুতরাং বাজেট বাড়াতে হবে এবং ব্যয়ের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।’

Development by: visionbd24.com